২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে অধিকাংশ কাউন্সিলর ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি তোলেন। এ নিয়ে সম্মেলনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। এর ১৫ দিন পর ৫ মে ৩৪ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির হাইকমান্ড। এতে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি এবং নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
তবে গঠনতন্ত্র মেনে ওই কমিটি করা হয়নি অভিযোগ তুলে পাল্টা কমিটি করে শ্রমিকদলের একাংশ। ২০১৪ সালের ৭ জুন এ এম নাজিম উদ্দিনকে সভাপতি এবং আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্যের কমিটি করে বিদ্রোহী গ্রুপ। পরে নাজিম উদ্দিন কমিটিতে থাকতে রাজি না হওয়ায় আবুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।
এদিকে, শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি এমন কমিটির মধ্যে অভিযোগ ওঠে, দুটি কমিটির কোনোটিই বৈধভাবে গঠিত হয়নি। কমিটি দুটিকে অবৈধ উল্লেখ করে শ্রম পরিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক শ্রম আদালতে চিঠি দেন। ফলে শ্রমিকদলের দুটি কমিটি অবৈধ।
তবে আনোয়ার-নাসিম কমিটিকে সমর্থন দিয়ে আসছে বিএনপির হাইকমান্ড। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দিয়ে শ্রমিকদল চলছে বলে দাবি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। তবে বিএনপির হাইকমান্ড সমর্থিত আনোয়ার-নাসিমের কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। ‘অবৈধ’ ঘোষিত কমিটি দিয়ে চলছে ৯ বছর। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে দুই দফা শ্রমিকদলের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।
বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শ্রমিক দলের নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে ঢাকার দুই মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিকদলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করে নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের মহাসচিব মো. জাফরুল হাসান এ চিঠি দেন। তবে ২০২০ সালে তিনি মারা যান। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, কমিটির মেয়াদের ৯ বছর পার হলেও সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনের পদপ্রত্যাশী এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিম প্রায় চার বছর ধরে অসুস্থ। তিনি সাংগঠনিক কাজে নিষ্ক্রিয়। নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তার যোগাযোগের নম্বরটিও অধিকাংশ সময় বন্ধ পাওয়া যায়। সভাপতি আনোয়ার হোসেনও বয়োজ্যেষ্ঠ। ফলে শ্রমিকদল এখন চরম নেতৃত্ব সংকটে।
এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকদলের কার্যক্রমে গতি ফেরাতে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। কমিটি গঠনের গুঞ্জনে পদপ্রত্যাশীরাও সক্রিয় হয়েছেন। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- বর্তমান কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন, শ্রমিকদলের সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ উজ-জামান মামুন মোল্লা, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য সাবেক সভাপতি কাজী আমীর খসরু, বর্তমান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমনির্ভর বাংলাদেশে শ্রমিকদল বিলুপ্তির পথে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায় ও উৎপাদন বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত শ্রমিকদল এখন অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর গ্রুপিংয়ে বিপর্যস্ত। বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে ব্যর্থ শ্রমিকদল শুধু দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালনেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কমিটি গঠনের চেষ্টা করা ছাড়া নেতারা কোনো কাজ করেননি।
পদপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় থাকা কাজী আমীর খসরু বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়া উচিত। আমি আট বছর ধরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে শ্রমিকদলকে সংগঠিত করেছি। কারাবন্দি ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সাধ্যমতো খোঁজ-খবর নিয়েছি। দল যখন, যেখানে দায়িত্ব দেবে আমি কাজ করতে প্রস্তুত।’
আরেক পদপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ-জামান মামুন মোল্লা বলেন, শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সংগঠন চলে না। তৃণমূলকে চাঙা রাখা ও তাদের মাঝে উদ্দীপনা তৈরি করতে হলে এখন নতুন কমিটি দরকার। এসব বিষয়ে সার্বিক দায়িত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে। তিনিই কাউন্সিল বা নতুন কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির হাইকমান্ড ঘোষিত কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। একাধিবার উদ্যোগ নিয়েও জাতীয় সম্মেলন করতে পারিনি। যে কোনো সময়ে সম্মেলন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা পেলেই সম্মেলন করা হবে।’