রাজ্য নেতৃত্ব ও সাংসদ-বিধায়কদের মধ্যে সমন্বয় করে এবার পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষায় নামছে বিজেপি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষার লড়াইয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে থাকছে আন্দোলনের কমান্ড! এমনটাই সূত্রের খবর।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সঙ্গে দলীয় বিধায়কদের সমন্বয়ের অভাব ঘটছিল নানা প্রশ্নে। বিধানসভার অভ্যন্তরে তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ে শুভেন্দু অধিকারী যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বিধানসভার বাইরে কোনও আন্দোলনে তাকে সেভাবে দেখা যাচ্ছিল না। পাশাপাশি বিধায়কদেরও আন্দোলনের সামনের সারিতে আসছিলেন না। দলের চিন্তন বৈঠকেও শুভেন্দু অধিকারী অংশ নেননি। স্বাভাবিকভাবেই দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে একটা বিভাজনের বার্তা যাচ্ছিল। এবার তা নিরসনে পদক্ষেপ নিলেন মুরলি ধর সেন লেনের কর্তারা। দলের অভ্যন্তরে যাতে সমন্বয় থাকে, তা নিশ্চিত করতে এবার থেকে প্রতি দুই মাস অন্তর সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তারা।
চার রাজ্যে বিধানসভার ভোটের পর উজ্জবিত গেরুয়া শিবির এবার পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করতে পথে নেমে আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে। আর তাই দলীয় বিধায়ক ও সাংসদদের নিয়েই রাজপথের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি।
বিধানসভার বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সমন্বয় তৈরি করতে শুক্রবার কলকাতার নিজাম প্যালেস প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। এই বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারসহ রাজ্য কমিটির সদস্যরা ও শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে দলীয় বিধায়করা অংশ নেন। ছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তী, অর্জুন সিং।
সূত্রের খবর, এই বৈঠকে ঠিক হয় জেলায় জেলায় নানা ক্ষোভ- বিক্ষোভ নিরসনের জন্য এবার বিজেপি সাংসদ-বিধায়করা নিজেদের উদ্যোগে প্রতিটি জেলায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। এর পাশাপাশি বিধানসভা ভিত্তিক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসংযোগ বৃদ্ধির করতেও তারা পথে নামবেন। জেলায় জেলায় তৈরি হবে সাংসদ-বিধায়ক ও জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি। এলাকাভিত্তিকভাবে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি মনে করছে, এভাবে চললে দলের অভ্যন্তরে সমন্বয় গড়ে উঠবে, যা তৃণমূল বিরোধী আন্দোলনে দলকে শক্তি যোগাবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গজুড়ে রাজপথের আন্দোলন করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষা চালানো হবে। মার্চ মাসেই বীরভূমের দেউচা-পাঁচমি কয়লা খনি বিরোধী আন্দোলনে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়াতে অভিযান করবে বিজেপি। কেন্দ্রে পাঠানো অর্থ রাজ্য নয়ছয় করছে, এই অভিযোগে দিল্লি অভিযানও করা হবে। এই অভিযানে বাংলায় সন্ত্রাসসহ একাধিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহেরও দ্বারস্থ হবে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। ১৫ এপ্রিলের পর নবান্ন অভিযান করা হবে।
এই অভিযানগুলো সফল করতে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে প্রচার আন্দোলন করা হবে। প্রচারের পাশাপাশি প্রতিটি অভিযানেই সক্রিয়ভাবে দলীয় বিধায়করা, সাংসদরা ও রাজ্য নেতারা অংশ নেবেন। রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি কমান্ড সামলাবেন শুভেন্দু অধিকারী।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘দেউচা-পাঁচামি বর্তমানে একটি জ্বলন্ত সমস্যা। সেখানকার অধিবাসীরা জমি দিতে চাইছেন না। রাজ্য সরকারের শিল্পের যে চেষ্টা, আমরা তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হলো, মুখ্যমন্ত্রী আগে যা কথা দিয়েছেন, কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারও জমি নেওয়া হবে না। সেই অবস্থান কেন তিনি রাখছেন না? প্রয়োজনে আমরা আগামী দিনে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো।’