চাঁদপুরে অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়েও ‘হত্যার শিকার’ হান্নান মৃধার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে কয়েক শতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ করেন।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে, সকাল সাড়ে ৯টা শহরের বিষ্ণুদী এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা লাশবাহী গাড়ি নিয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা ঘেরাও করার উদ্দেশে শহরের শপথ চত্বর মোড়ে চলে যান। তাদের দাবি, নিখোঁজের পরপর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় ১৩ দিন পর ব্যবসায়ী হান্নানকে লাশ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে হয়েছে। তবে শপথ চত্বরে এসে মডেল থানার ওসি আসামিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরে তারা সেখান লাশ নিয়ে নতুনবাজার হয়ে পুনরায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চলে আসেন।
নিহত হান্নানের বোনের জামাতা রুবেল ও চাচাতো ভাই আল-আমিনসহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, হান্নানের স্ত্রী আয়েশা, শ্যালক হিরা ও শাওনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই রাশেদুজ্জামানের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করার পর বেনাপোল যেতে কয়েকবার অনুরোধ করি। এ ছাড়া হান্নানের লাশ আনার সময়ও তাকে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তার গাফিলতির কারণে হান্নানের মৃত্যু হয়। আমরা এসআই রাশেদের প্রত্যাহার ও শাস্তি কামনা করছি।
হান্নানের ভাতিজা সাগর মৃধা দাবি করেন, ‘আমার কাকাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েও বিচার পাইনি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলতে থাকবে। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। বিক্ষোভকারীদের বিষয়টি আশ্বস্ত করা হয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘যে দাবিতে তারা সড়কে নেমেছে, তার জন্য আমাদের সময় দিতে হবে। পুলিশ জনগণের জন্যই কাজ করে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনবো। এর জন্য সবার সহযোগিতা করতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ দুপুর ১টার দিকে হান্নান দোকান বন্ধ করে তার শ্বশুড়বাড়িতে (চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়ন) শিশু সন্তানকে দেখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর মধ্যে একটি নম্বর থেকে হান্নানকে জীবিত ফেরত নিতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। নিখোঁজের ১৩ দিন পর ১৪ মার্চ বেনাপোলে হান্নানের লাশের সন্ধান মেলে। সকাল ৯টায় যশোরের শার্শা থানা পুলিশ গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় হান্নানের লাশ উদ্ধার করে।
হান্নান মৃধা চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের বিষ্ণুদী মৃধা বাড়ি এলাকার আবুল হোসেন মৃধার ছেলে। বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তার একটি দোকান রয়েছে।