একদিকে নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের দাম। অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে জ্বালানির বাজার। বেড়েছে তেল ও এলএনজির দাম। এরইমধ্যে গত নভেম্বর মাসে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এখন আবার নতুন করে আলোচনায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি। এমন এক পরিস্থিতিতে সোমবার (২১মার্চ) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানি।
সরকার এক শ্রেণির মানুষের জন্য টিসিবির সুবিধা নিয়ে এলেও নিত্যপণ্যের টালমাটাল বাজারে অস্থির সব শ্রেণির মানুষ। এমন অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো, ভর্তুকি এবং কোম্পানির মুনাফা সমন্বয় করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কোনওভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো সঠিক হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, দেশে গ্যাস ঘাটতির কারণে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। সরকার মনে করছে, চলতি বছরই দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে আমদানি করা এলএনজি গ্রিডে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ভর্তুকির হিসাব-নিকাশে বড় পার্থক্য হতে পারে। এ অবস্থায় সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি।
প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দেশে। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে ২ হাজার ২৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট তোলা হচ্ছে। আমদানি করা হচ্ছে ৭৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। স্পট মার্কেট থেকে আমদানি হচ্ছে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকিটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে কিনে আনা হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়াতে প্রতি এমএম বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি ৫১ ডলারেও কিনতে হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় প্রতি ঘনমিটার এলএনজি ৪০ টাকায় কিনে আনা হয়।
পেট্রোবাংলা বলছে, এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন ২২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্রীষ্মকে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে হলে এই সরবরাহ অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তে হবে। ফলে গ্যাসের দাম না বাড়ালে এই অতিরিক্ত গ্যাস আমদানিতে অতিরিক্ত ভর্তুকির প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে বিইআরসির একজন সদস্য বলেন, স্পট মার্কেট থেকে কেনা গ্যাসের দাম নিয়েই আসলে মূল সমস্যা। অথচ এর পরিমাণ কিন্তু খুব বেশি নয়। জ্বালানি বিভাগ উদ্যোগ নিলে দেশের ভেতরের ক্ষেত্রগুলো থেকেই উৎপাদন বাড়িয়ে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তাহলে আর গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও দরকারই হয় না।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, কোনওভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। দাম বৃদ্ধির নানামুখী প্রভাব আছে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। তারমধ্যে এই দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে একেবারেই লাগাম ছেড়ে না ঠিক হবে না। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর বিষয়টি নানাভাবে সমন্বয়ের সুযোগ আছে। যে ভর্তুকি আছে সে ভর্তুকিতেই বর্তমান দাম স্ট্যাবল রাখা যায়।
তিনি বলেন, স্পট মার্কেট থেকে কম দামে গ্যাস কেনার কথা থাকলেও এখন সরকার সবচেয়ে বেশি দামে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আনছে। এখন এটিকেই যুক্তি ধরে গ্যাসের দামের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এটা নির্বুদ্ধিতা নয়, দুরভিসন্ধি কাজ। ভোক্তারা এই দাম গ্রহণ করতে পারবে না।